Wellcome to National Portal
Text size A A A
Color C C C C

সর্ব-শেষ হাল-নাগাদ: ২৯ August ২০২২

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম

“পল্লী বিদ্যুতের আলোর ফেরিওয়ালা” কার্যক্রম: দুর্নীতি এবং হয়রানিমুক্ত গ্রাহক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ মূলমন্ত্রকে সামনে রেখে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড কর্তৃক ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির সফল বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ কার্যক্রমটি গত ২৪/১২/২০১৮ খ্রি. তারিখ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এ কার্যক্রমে বিদ্যুৎ কর্মীগণ ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে প্রয়োজনীয় মালামাল ভ্যান/পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনে নিয়ে গ্রাহকের বাড়ী বাড়ী গিয়ে তাৎক্ষনিকভাবে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করছে। এ উদ্ভাবনী উদ্যোগের মাধ্যমে প্রতিমাসে প্রায় ৩ লক্ষ গ্রাহক সংযোগ পাচ্ছেন। ফলে মধ্যস্বত্ত¡ভোগীদের দৌরাত্ম বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে এবং গ্রাহকগণ দুর্নীতি ও হয়রানিমুক্ত পরিবেশে সেবা পাচ্ছেন। স্বল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ীমূল্যে বৈদ্যুতিক সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া সম্ভব হওয়ায় কার্যক্রমটি সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হতে অদ্যাবধি (জুলাই’২০২২ পর্যন্ত) ২০,৫৮,৪৪৩টি বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার জন্য ২০১৯ সালে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে “ইনোভেশন শোকেসিং” এ “প্রথম পুরস্কার” প্রদান করা হয়েছে। 
 
“পল্লী বিদ্যুতের উঠান বৈঠক” কার্যক্রম: “শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ” এই কালজয়ী মূলমন্ত্রকে ধারণ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাপবিবো কর্তৃক গত ১৫/০৯/২০১৯ খ্রি. তারিখ হতে “পল্লী বিদ্যুতের উঠান বৈঠক” কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ কার্যক্রমের শুরু হতে জুলাই’২১ পর্যন্ত সারাদেশব্যাপী মোট ৪৩,১৪১ টি উঠান বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে এবং মোট ৮৮,২২০টি অভিযোগ নিষ্পন্ন হয়েছে। উক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা/কর্মচারীগণ গ্রাহকের দোরগোড়ায় পৌঁছে গ্রাহকগণের অভিযোগ এবং সমস্যাসমূহ সরাসরি শুনে তা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। “পল্লী বিদ্যুতের উঠান বৈঠকে” স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ, স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক/শিক্ষার্থীগন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ এবং গ্রাহকগণ অংশগ্রহণ করছেন। বিশেষভাবে এ উদ্যোগে গ্রামীণ মহিলাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। এ উদ্যোগের ফলে দুর্নীতিমুক্ত এবং হয়রানিমুক্ত পরিবেশে সেবা প্রদানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উক্ত বৈঠকে গ্রাহক শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ, বিদ্যুৎ চুরি রোধ, বিদ্যুতের অপব্যবহার রোধ, দুর্নীতি প্রতিরোধ, বকেয়া বিল আদায়, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, সিস্টেম লস হ্রাসকরণ ইত্যাদি বিষয়েও গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে এ কার্যক্রমটি সর্বমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। 
 
“পল্লী বিদ্যুতের দুর্যোগে আলোর গেরিলা” কার্যক্রম:  সম্প্রতি বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে আবির্ভূত করোনা ভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য সেবাসহ সকল সেবা কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালু রাখা, পবিত্র মাহে রমজান ও মৌসুমি ঝড় বৃষ্টি বা ঘূর্ণীঝড়, কালবৈশাখীসহ যে কোন প্রতিকূল পরিবেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রাখাসহ সকল ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট সংক্রান্ত অভিযোগ নিরসনের জন্য “সকল ত্যাগে পল্লী বিদ্যুৎ রাখিব সচল” মূলমন্ত্র ধারণ করে ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে উদ্ভাবনী উদ্যোগ হিসেবে গত ১৩/০৪/২০২০ খ্রি. তারিখে বাপবিবো কর্তৃক “দুর্যোগে আলোর গেরিলা” কার্যক্রমটি আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু করে। এ কার্যক্রমের মাধ্যমে বাপবিবো এর আওতাধীন সকল গ্রাহককে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার পাশাপাশি তাদের বিদ্যুৎ সংক্রান্ত সকল অভিযোগ নিরসনের মাধ্যমে জীবনযাত্রা স্বস্তিদায়ক করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়; যা সারাদেশে সর্বস্তরে/সর্বমহলে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের সময়কালে সাধারণ মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে দ্রæততার সাথে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে নিরসন করার জন্য এই “দুর্যোগে আলোর গেরিলা” দল সচেষ্ট ছিল।
যে কোন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ স্পট চিহ্নিতকরণ, ক্ষয়ক্ষতি নিরসন ও তাৎক্ষণিকভাবে দ্রত বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিরসনের লক্ষ্যে নিম্নোক্তভাবে টিম/ইউনিট গঠনের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে:
 
(ক) মূল/বিকল্প ইউনিট প্রধান             - ১ জন
(খ) সমিতির লাইনম্যান - ২ জন
(গ) ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের (সুপারভাইজার/ফোরম্যান/লাইনম্যান) - ২ জন
(ঘ) রেগুলার/প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ভিলেজ ইলেকট্রিশিয়ান - ২ জন
(ঙ) স্থানীয়/ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের (নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে - প্রয়োজন অনুসারে
       আলোচনাক্রমে) সৎ, কর্মঠ ও দক্ষ শ্রমিক।
 
আমার গ্রাম-আমার শহর: সরকার ঘোষিত “আমার গ্রাম-আমার শহর” বিনির্মাণে সরকারী পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাপবিবো বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে চলছে। ২০২১ সালের মধ্যে সবার জন্য বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা, ২০৩০ সালের মধ্যে “এসডিজি”র লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য টেকসই, নির্ভরযোগ্য, আধুনিক ও সাশ্রয়ীমূল্যে বিদ্যুৎ নিশ্চিত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার জন্য বাপবিবো প্রয়োজনীয় বৈদ্যুতিক অবকাঠামো ও টেকসই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। এ জন্য প্রতিটি সমিতিতে একটি করে “মডেল গ্রাম” নির্বাচন করা হয়েছে এবং উক্ত মডেল গ্রামের অভিজ্ঞতার আলোকে পর্যায়ক্রমে সকল গ্রামে নিরবচ্ছিন্ন ও আধুনিক বৈদ্যুতিক অবকাঠামো  গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। বাপবিবো এর আওতধীন ৮০টি সমিতি কর্তৃক ইতোমধ্যে ১,৭৮,৯৩৪টি ক্ষুদ্র শিল্প, ১৩,১২৩টি মাঝারি শিল্প এবং ৩৭৫টি বৃহৎ শিল্প অর্থাৎ মোট ১,৯২,৪৩২টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে ইজি বাইকের মাধ্যমে জনগণের যাতায়াত সহজতর হয়েছে। তাছাড়া পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও ইজি বাইক ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ইজি বাইকের ব্যাটারী চার্জিংয়ের জন্য ১৪টি সোলার চার্জিং স্টেশন এবং ২৫১৮টি গ্রীড চার্জিং ষ্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।
 
আমার গ্রাম আমার শহরে বিদ্যুতায়নের প্রভাব: সরকারের আমার গ্রাম-আমার শহর বিনির্মাণে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতায়ন করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের পাশাপাশি কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্য প্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কর্তৃক বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে লোড বৃদ্ধির জন্য যে উদ্দ্যোগ গ্রহণ করেছে তাতে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছে। মডেল গ্রাম ঘোষণার প্রেক্ষিতে কাঙ্খিত মাত্রায় ক্রমাগতভাবে লোড বৃদ্ধি পাচ্ছে। মডেল গ্রামসমূহে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করার কারনে শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছে যা সরকারের আমার গ্রাম আমার শহর বিনির্মাণে সহায়ক ভূমিকা রাখছে।
 
বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিরসনে কমিটি গঠন: পল্লী বিদ্যুতের উঠান বৈঠক, আলোর ফেরিওয়ালা, দুর্যোগে আলোর গেরিলা ইত্যাদি উদ্ভাবনী কার্যক্রমের ন্যায় “বিদ্যুৎ বিভ্রাট পর্যবেক্ষণ কমিটি”ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে বিদ্যুৎ সেবা প্রদানকে উন্নত করছে। আলোচ্য কমিটি সমিতির সকল অফিসের সাথে নিজ উদ্যোগে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করে কোন স্থানে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটলে কিংবা ঘটার সম্ভাবনা দেখা দিলে তা দ্রুত সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার/জেনারেল ম্যানেজার/ডিজিএম (কারিগরী) কে ত্রুটি নিরসনের জন্য অবহিত করে থাকেন। সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার/জেনারেল ম্যানেজার কর্তৃক ''বিদ্যুৎ বিভ্রাট পর্যবেক্ষণ কমিটি'' এর সকলের মোবাইল নম্বর উল্লেখ করে একটি লিফলেট জারী করত; বিদ্যুৎ বিভ্রাটজনিত সকল তথ্যাদি এই কমিটির নিকট প্রদান করতে হবে-মর্মে বিষয়টি গ্রাহকদেরকে অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া, ''বিদ্যুৎ বিভ্রাট পর্যবেক্ষণ কমিটি'' এর বিষয়টি লিফলেট, মাইকিং ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে স্কুল-কলেজ, মসজিদ-মাদ্রাসা, হাট-বাজার ইত্যাদি জনসমাগম স্থলে ব্যপকভাবে প্রচার-প্রচারণা করার মাধ্যমে গ্রাহক সচেতনতা বৃদ্ধি করা হয়।